ব্রেকিং:
মাওলানা ত্বহার হোয়াটসঅ্যাপ-ভাইভার অন; বন্ধ মোবাইল ফোন কে এই মাওলানা ত্বহার ২য় স্ত্রী সাবিকুন নাহার? আওয়ামীলীগের ধর্মীয় উন্নয়নকে ব্যাহত করতে ত্বহা ষড়যন্ত্র স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রতারণা ফেনীতে করোনার নমুনা সংগ্রহ করবে স্বাস্থ্যকর্মীরা ফেনীর বিভিন্নস্থানে মোবাইল কোটের অভিযান : ১৪ জনের দন্ড ফেনীতে কৃষকের ধান কেটে বাড়ি পৌছে দিয়েছে ছাত্রলীগ করোনার তাণ্ডবে প্রাণ গেল ২ লাখ ১১ হাজার মানুষের ফেনীর ৭ সরকারি কলেজের একদিনের বেতন ত্রাণ তহবিলে ফেনী ধলিয়ায় গ্রাম পুলিশের বাড়িতে হামলা, আহত ২ মানসম্মত কোন ধাপ অতিক্রম করেনি গণস্বাস্থ্যের কিট পরিস্থিতি ঠিক না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব স্কুল-কলেজ বন্ধ আপনিকি করোনা পরীক্ষায় গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের কিট ব্যবহারের বিপক্ষে? ফেনীতে বাড়তি দামে পণ্য বেচায় ৭ দোকানের জরিমানা দেশে করোনায় আক্রান্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার, একদিনে মৃত্যু ৫ যুক্তরাষ্ট্রে করোনা জয় করলেন ১ লাখেরও বেশি মানুষ ফেনীতে গাঁজাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার ফেনী শহরে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের প্রধানমন্ত্রীর উপহার প্রদান ফেনীতে ডাক্তারদের সুরক্ষা ও রোগীদের চিকিৎসা সামগ্রী দিয়েছে বিএমএ করোনায় মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৯২ হাজার ছাড়ালো
  • শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

সুফীর ছদ্মবেশে ভণ্ড ও একটি শিক্ষা

ফেনীর হালচাল

প্রকাশিত: ৪ মার্চ ২০২০  

আবু তাইয়েব আবদে মুমিন বর্ণনা করেন, একবার বাগদাদ থেকে অত্যন্ত চতুর ও ধূর্ত দুনিয়ালোভী লোক স্ত্রীকে নিয়ে হিমস আগমন করলেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনই ছিল প্রতারণায় সিদ্ধহস্ত।

দুজন মিলে ফন্দি আঁটলো হিমসের লোক তেমন ধর্মভীরু না হলেও ধর্মপ্রাণ লোকদের অনেক ভক্তি সম্মান করে। পীর বুযুর্গদের প্রতি অগাধ ভক্তি ও শ্রদ্ধা তাদের অন্তরে রয়েছে। তারা ঠিক করল মানুষের মনের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করেই নিজেদের আখের গোছানোর কাজটা করতে হবে।

যেমন কথা তেমন কাজ। স্বামী স্ত্রীকে বলল, যা বলছি মনোযোগ দিয়ে শুনবে। কোনো ভুল করলে ধান্দা তো হবেই না, বরং প্রাণ নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে বলে দিলাম।

স্ত্রী বলল, ঠিক আছে, বুঝতে পেরেছি। কি করতে হবে বলুন।

এবার স্বামী প্ল্যানের বিস্তারিত বিবরণ দিতে লাগলো: তাহলে শুনো। তুমি অমুক বস্তিতে গিয়ে একটা ঘর ভাড়া নেবে। পারতঃপক্ষে ঘর থেকে বের হবে না। মানুষের দৃষ্টিতে না পড়ার চেষ্টা করবে। আর আমি অমুক অভিজাত ও ধনী এলাকার অমুক মসজিদে গিয়ে আস্তানা গেড়ে বসবো। তুমি কখনো আমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করবে না।

তোমার কাজ হলো, প্রতিদিন তিন পোয়া কিসমিস, তিন পোয়া বাদাম গুঁড়ো করে আমি যে মসজিদে অবস্থান করবো তার বাথরুমের নিকট সন্তর্পনে রেখে আসা। খবরদার! কেউ যেন তোমাকে সেখানে এগুলো রাখতে দেখে না ফেলে। তাহলে কিন্তু সব প্ল্যান ভেস্তে যাবে।

কিসমিস, বাদাম প্রতিদিন একই পরিমাণে গুঁড়ো করবে। কমবেশি যেন না হয়। আবার মনে করিয়ে দিচ্ছি, নিজ থেকে আমার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করবে না।

স্ত্রী সম্মতি জানিয়ে বলল, ঠিক আছে। আপনি যেভাবে বলছেন সেভাবেই সব কিছু হবে। এ নিয়ে আপনি একদম চিন্তা করবেন না। 
স্ত্রীকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে সে নিজের দিকে মনোযোগ দিল। দরবেশদের বেশভূষা ধারণে সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করলো। ছদ্মবেশে যেন কোনো খুঁত না থাকে তার সর্বাত্মক চেষ্টা চালালো।

বড় আলখেল্লা, মাথায় ইয়া বড় পাগড়ি, রুমাল পড়ে নিজেকে বিরাট বুযুর্গ বানিয়ে তুলল। আস্তে আস্তে জামে মসজিদে গিয়ে উঠল। চেহারায় রাজ্যের বিরক্তি এনে মুখখানায় এমন ভাব ফুটিয়ে তুলল, যেন এ জগতের কোনো কিছুর সঙ্গেই তার কোনো সম্পর্ক নেই।

অবস্থানের জন্য বেছে নিল সেই স্থান যেখানে লোকজনের যাতায়াত বেশি হতো। একাগ্রচিত্রে নফল, জিকির, তেলাওয়াত শুরু করল। কারো সঙ্গে কোনো কথা বলত না। কিন্তু আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে অত্যন্ত সজাগ থাকতো। শুরুর দিকে তাকে কেউ বিশেষ লক্ষ্য করলো না। কয়েক দিন পর একজন দুজন দুজন করে অনেকেরই চোখে পড়ল।

একজন লোক একই অবস্থায় দিনের পর দিন ইবাদত করে যাচ্ছে। পানাহারের জন্যও কোথাও যায় না। বিষয়টি এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করলো। সে শুধু দুপুরে স্থান ছেড়ে উঠে বাথরুমে গিয়ে হাজত সেরে নিত। তার স্ত্রী যে বাদাম ও কিসমিসের হালুয়া রেখে যেত তা বাথরুমেই খেয়ে নিত।

হালুয়াটা দেখতে ছিল বিশ্রী। অনেকটা মানুষের মলের মতো। লোকেরা বাথরুমে গিয়ে তা দেখলেও মানুষের মল মনে করে কাছে যেত না। হালুয়া খেয়ে তার শরীরে এমন শক্তি পয়দা হলো, দিনরাত ইবাদতে মশগুল থাকলেও তেমন একটা ক্লান্তি বোধ করত না। রাতে চুপিসারে সবার অগোচরে পানি পান করে নিত।

তার ইবাদত বন্দেগীর কথা লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ল। লোকেরা ভাবল এই বুযুর্গ কোনো কিছু না খেয়ে দিনরাত ইবাদতে মশগুল থাকেন, নিশ্চয়ই বিরাট মর্যাদাবান ওলীয়ে কামেল বুযুর্গ। দূরদুরান্ত থেকে লোকেরা তাকে দেখতে আসত। তার মুখ থেকে মূল্যবান নসিহত শুনে ধন্য হতে চাইত। কিন্তু সে মুখে সম্পূর্ণ তালা মেরে রেখেছিল। আস্তে আস্তে বিষয়টি এলাকায় বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি করে।

লোকজন এসে তার অবস্থানের স্থান স্পর্শ করে বরকত হাসিল করতো। সে স্থানের মাটি বরকতের জন্য নিয়ে যেত। বাচ্চা ও অসুস্থদের তার নিকট নিয়ে আসা হতো। সে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে সুস্থ হয়ে যাবে, এমন বিশ্বাস তৈরি হলো। কারো দিকে নেকনজর দিলে তার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমন উদ্ভট ধারণাও তৈরি হলো।

এভাবে বছর হতে চলল। যখন সে বুঝলো তার ভক্তি লোকদের অন্তরে গভীরভাবে গেঁথে গেছে, এবার চূড়ান্ত খেলা শুরু করল। 
সুযোগ বুঝে একদিন স্ত্রীর সঙ্গে বাথরুমে দেখা করল ও পরবর্তী প্লান সম্পর্কে বিস্তারিত জানালো।

শুক্রবার। জুমআর দিন। জামে মসজিদ লোকে লোকারণ্য। মসজিদে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। হঠাৎ একদিকে শোরগোল চিৎকার শোনা গেল। সবার মনোযোগ সেদিকে ঘুরে গেল। লোকজন দেখল, জীর্ণশীর্ণ পোশাক পরিহিত এক নারী তাদের অতি শ্রদ্ধার পাত্র সেই বুযুর্গের পোশাকের আস্তিন চেপে ধরে ক্রমাগত ঝাঁকুনি দিচ্ছে। আর মুখ দিয়ে গালিগালাজের তুফান ছোটাচ্ছে।

ভণ্ড, খুনী, ছোটলোক। তোকে আমি সারা দুনিয়া খুঁজে বেড়াচ্ছি, আর তুই এখানে লুকিয়ে আছিস। এখানে এসে বুযুর্গের বেশ ধরেছিস। লোকদের হেদায়েত বিতরণ শুরু করেছিস। ব্যাটা ভণ্ডামীর জায়গা পাওনা তাই না? আমার ছেলেকে খুন করে পালিয়ে এসে ভেবেছিস প্রাণে বাঁচতে পারবি? কখনো না। চল, আমার সঙ্গে। আজ তোকে কাজির দরবারে নিয়ে উচিৎ শিক্ষা দিয়ে ছাড়ব। আমার ছেলেকে হত্যার বদলা স্বরূপ তোকেও হত্যা করব।

উপস্থিত মুসল্লিরা নারীকে শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। লোকেরা উত্তেজিত হয়ে নারীকেই দোষারোপ করতে লাগল। 
তুমি কি পাগল নাকি? এই বুযুর্গ প্রায় বছরখানেক এখানে কোনো কিছু পানাহার করা ব্যতীত ইবাদতে মশগুল। তিনি অতি বড় কামেল মানুষ। ইনি তোমার ছেলেকে কিছুতেই হত্যা করতে পারেন না। তুমি নিশ্চয়ই ভুল করছ। তাদের মতো কামেল মানুষদের ওসীলাতেই দুনিয়া টিকে আছে। আর তুমি তাকে খুনি বলছ। ছিঃ ছিঃ যাও এখান থেকে। ঝামেলা করো না।

কথিত বুযুর্গ হাতের ইশারায় সবাইকে থামতে বললেন, তারপর দাঁড়িয়ে ভাষণ দেয়ার ভঙ্গিতে বলতে লাগলেন, যেদিন থেকে এখানে এসেছি, কেউ আমাকে কথা বলতে শুনেনি। আজ প্রথমবার আপনাদের সামনে কিছু বলতে চাই।

উৎসুক জনতা তার কথা শুনতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলেন। বিশাল মসজিদে নেমে এল পিনপতন নিরবতা। সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে।

তিনি বলতে লাগলেন, আমি সত্যিই একজন খুনী, অপরাধী। আমি নারীর ছেলেকে খুন করেছি। অনুতাপ, অনুশোচনার আগুনে দগ্ধ হয়ে নিয়ত করেছি সারা জীবন ইবাদত বন্দেগীতে কাটিয়ে দেব। এ জন্যই এখানে সারা বছর ইবাদত করছি। কিন্তু আমার পাপের চিন্তা আমার পিছু ছাড়ছে না। বারবার ভেবেছি, ফিরে যাই। কিসাস স্বরূপ হত্যার জন্য নিজেকে নারীর নিকট সোপর্দ করে দেই। কিন্তু যাওয়া হয়নি। এরপর দোয়া করেছি হে আল্লাহ! আমার খোঁজ নারীকে জানিয়ে দাও। সে যেন এসে প্রতিশোধ নিতে পারে। এতদিনে আমার দোয়া কবুল হয়েছে। নারী চলে এসেছে। আপনাদের প্রতি হাতজোড় করে মিনতি করছি, আপনারা নারীকে তার কাজে বাধা দেবেন না। কিসাস স্বরূপ আমাকে হত্যার জন্য আমি নারীর সঙ্গে চলে যাচ্ছি। আপনারা ভালো থাকবেন। খোদা হাফেজ।

তার বক্তৃতায় উপস্থিত জনতার মাঝে শোকের ছায়া নেমে এল। সবাই তার প্রাণ বাচাঁতে উৎকণ্ঠিত হয়ে উঠল। নেতৃস্থানীয় ও প্রভাবশালী যারা ছিলেন তাদের একজন সমবেত জনতাকে লক্ষ্য করে বললেন, ভায়েরা আমার! আপনারা জানেন, উনি অত্যন্ত কামেল লোক। তাকে আমরা এভাবে মরতে দিতে পারি না। তার জন্য আমাদের কিছু একটা করা উচিত। আসুন সবাই মিলে নারীকে বুঝাতে চেষ্টা করি, যেন এই মহামানবকে হত্যার পরিবর্তে কিছু টাকা পয়সা নিয়ে ক্ষমা করে দেয়। এই টাকা আমরা সবাই চাঁদা উঠিয়ে পরিশোধ করব। আপনারা কি রাজি আছেন?

সবাই সমস্বরে চিৎকার করে উঠল: আমরা রাজি, আমরা রাজি। নারীকে এই প্রস্তাব দেয়া হলে সে সরাসরি প্রত্যাখান করল। লোকেরা বলল: একজন লোকের রক্তপণ ১০ হাজার দিরহাম হয়। আমরা তোমাকে ২০ হাজার দিরহাম দিতে রাজি আছি। তবুও তুমি এই বুযুর্গকে ক্ষমা করে দাও। নারীর একই কথা। না, হবে না। আমি কিসাসই চাই। লোকেরা বৃদ্ধি করতে করতে যখন দশ দিয়াত অর্থাৎ একলাখ দেরহাম দিতে সম্মত হলো। তখন নারীটি বলে উঠল, আচ্ছা তোমরা এক লাখ দিরহাম আমার সামনে এনে রাখ। তারপর ভেবে দেখব, ক্ষমা করা যায় কি না। নারীকে নরম হতে দেখে এতক্ষণে তাদের দেহে যেন প্রাণ ফিরে এলো।

তারা অতিদ্রুত চাঁদা উঠাতে শুরু করল। অল্পসময়েই এক লাখ দিরহাম নারীর সামনে রেখে দিল। তবুও নারী মানতে চাইল না। তখন লোকেরা দামি দামি কাপড়, আংটি, নারীরা দামি দামি অলংকার তার সামনে রাখতে লাগল। অবশেষে সে ক্ষমা করতে রাজি হয়। সমস্ত টাকা পয়সা, অলংকার, কাপড় একটি থলিতে নিয়ে ধীরে ধীরে মসজিদ থেকে বেরিয়ে গেল।

এই ঘটনার পর কয়েকদিন সেই ছদ্মবেশী বুযুর্গ মসজিদেই কাটাল। যখন অনুমান করল, তার স্ত্রী এসব ধনসম্পদ নিয়ে হিমস থেকে নিরাপদ দূরত্বে চলে গেছে তখন এক রাতে সুযোগ বুঝে সেও মসজিদ থেকে বেরিয়ে চলে গেল।

পরদিন লোকেরা তাকে না দেখে তো অবাক! ভাবলো, তাকে বাচাঁনোর জন্য আমরা সামর্থের সবটুকু উজাড় করে দিলাম আর সে আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেল। আমাদেরকে একবার বলে যাওয়ারও প্রয়োজন মনে করল না। লোকেরা এতে ভীষণ মনোক্ষুন্ন হলো। অনেকদিন পর তারা বুঝতে পারে, এসবই ছিল বানোয়াট নাটক। তাদের ধন সম্পদ হাতিয়ে নেয়ার জন্যই এইসব কাহিনী সাজানো হয়েছিল। 

শিক্ষা : আমাদের বর্তমান সমাজেও এমন ভণ্ড প্রতারক ফকির পীর আউলিয়া রয়েছে। তারা বুযুর্গ সাজার ছদ্মবেশে মানুষ থেকে অর্থ সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়। এমন প্রতারক ভণ্ড পীরদের থেকে দূরে থাকতে হবে।

ফেনীর হালচাল
ফেনীর হালচাল