ব্রেকিং:
মাওলানা ত্বহার হোয়াটসঅ্যাপ-ভাইভার অন; বন্ধ মোবাইল ফোন কে এই মাওলানা ত্বহার ২য় স্ত্রী সাবিকুন নাহার? আওয়ামীলীগের ধর্মীয় উন্নয়নকে ব্যাহত করতে ত্বহা ষড়যন্ত্র স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রতারণা ফেনীতে করোনার নমুনা সংগ্রহ করবে স্বাস্থ্যকর্মীরা ফেনীর বিভিন্নস্থানে মোবাইল কোটের অভিযান : ১৪ জনের দন্ড ফেনীতে কৃষকের ধান কেটে বাড়ি পৌছে দিয়েছে ছাত্রলীগ করোনার তাণ্ডবে প্রাণ গেল ২ লাখ ১১ হাজার মানুষের ফেনীর ৭ সরকারি কলেজের একদিনের বেতন ত্রাণ তহবিলে ফেনী ধলিয়ায় গ্রাম পুলিশের বাড়িতে হামলা, আহত ২ মানসম্মত কোন ধাপ অতিক্রম করেনি গণস্বাস্থ্যের কিট পরিস্থিতি ঠিক না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব স্কুল-কলেজ বন্ধ আপনিকি করোনা পরীক্ষায় গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের কিট ব্যবহারের বিপক্ষে? ফেনীতে বাড়তি দামে পণ্য বেচায় ৭ দোকানের জরিমানা দেশে করোনায় আক্রান্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার, একদিনে মৃত্যু ৫ যুক্তরাষ্ট্রে করোনা জয় করলেন ১ লাখেরও বেশি মানুষ ফেনীতে গাঁজাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার ফেনী শহরে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের প্রধানমন্ত্রীর উপহার প্রদান ফেনীতে ডাক্তারদের সুরক্ষা ও রোগীদের চিকিৎসা সামগ্রী দিয়েছে বিএমএ করোনায় মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৯২ হাজার ছাড়ালো
  • রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

বিশ্বনেতাদের চোখে জাতির পিতা

ফেনীর হালচাল

প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০২০  

কেউবা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন, কেউবা মুগ্ধ তাঁর ব্যক্তিত্বের কথা জেনে। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি দেখে, তাঁর সাদাসিধে জীবনযাপনের কথা জেনে কেউ কেউ রীতিমতো বিস্মিত। অনেকেই আবার বলেছেন, তিনি শুধু বাংলাদেশের নেতাই ছিলেন না, ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তাঁকে বিশ্বের অন্যতম আলোচিত নেতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন কেউ কেউ।

বঙ্গবন্ধুকে এভাবে যাঁরা স্বীকৃতি দিয়েছেন, সম্মান দেখিয়েছেন বা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন, তাঁদের কেউই এ দেশের নাগরিক নন। তাঁরা বিশ্বনেতা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান অথবা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। বাংলাদেশ সফরে এসে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর দেখার পর তাঁরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নিজের হাতে মন্তব্য লিখেছেন। এসব মন্তব্য হয়ে উঠেছে জাদুঘরের মূল্যবান সম্পদ।

বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া জানা বা বোঝার সুযোগ থাকলেও বিশ্বনেতা বা অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মন্তব্য দেখার সহজ সুযোগ নেই। এসব মন্তব্য সযত্নে তুলে রাখা হয়।

প্রণব ও মোদির চোখে বঙ্গবন্ধু
প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মনে করেন, এই স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন তাঁর জন্য বড় সম্মান ও বিরল সুযোগ। বঙ্গবন্ধুকে বড় মাপের নেতা আখ্যা দিয়ে ভারতীয় জনগণের পক্ষ থেকে ২০১৫ সালের ৬ জুন তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন তিনি। মোদির মূল্যায়ন হচ্ছে, একজন বড় মানবতাবাদী হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান সব মানুষের সমতা ও সুযোগের পক্ষে ছিলেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চির অটুট বন্ধনে বঙ্গবন্ধুর যে লক্ষ্য ছিল, তা উপলব্ধি করার প্রতিশ্রুতি দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বঙ্গবন্ধুকে সাহসী নেতা আখ্যা দিয়ে লিখেছেন, ‘আই স্যালুট দ্য ব্রেভ লিডার অব অল টাইমস।’ একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্মদাতাকে এভাবে হত্যা করায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। প্রণব লিখেছেন, এই বাড়ি থেকে শেখ মুজিব বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে নেতৃত্ব দেন এবং এই বাড়িতেই তাঁকে হত্যা করা হয়। ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি তিনি জাদুঘর পরিদর্শন করেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। দেশটির অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল গুরবক্স সিং সিহোটা মন্তব্য খাতায় লিখেছেন, ‘আমরা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া ভারতীয় যোদ্ধা। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। যুদ্ধে আমাদের ভূমিকা এ দেশের মানুষের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে।’ ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর তিনি বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন করেন।

গত বছরের ১৫ জুলাই ভারতের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং মন্তব্য করেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁকে স্মরণ করা হবে।

কেবল বঙ্গবন্ধু নও, ভুটানেরও বন্ধু
মন্তব্য বইয়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে চিঠি লিখেছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। এ বছরের ১২ এপ্রিল জাদুঘর পরিদর্শনের পর তিনি লিখেন, ‘প্রিয় শেখ মুজিব, মানুষ বলে তুমি মৃত। কিন্তু আমি অনুভব করি তুমি আজও আমাদের চারপাশে। আমি খুশির সঙ্গে জানাতে চাই যে তোমার স্বপ্ন আজ তোমার মেয়ে শেখ হাসিনার দ্বারা পূরণ হয়েছে। তুমি বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছ। তুমি কেবল বঙ্গবন্ধু নও, ভুটানেরও বন্ধু।’

জাদুঘর পরিদর্শনের পর ভুটানের কুইন মাদার বা রাজমাতা শেরিং পেম ওয়াংচুক মন্তব্য করেন, খুবই চমৎকার। একজন মহান ও দূরদর্শী নেতাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি। ২০১৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভুটানের সাবেক রাজা জিগমে সিংহে ওয়াংচুকের তৃতীয় স্ত্রী শেরিং পেম ওয়াংচুক এখানে আসেন।

শ্রীলঙ্কা গর্বিত
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা বঙ্গবন্ধুকে এই অঞ্চলের মহান নেতা আখ্যা দিয়ে বলেন, তাঁর ত্যাগ বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করে যাবে। এই অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জনে বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য পূরণের অংশীদার হতে পেরে শ্রীলঙ্কা গর্বিত। ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন তিনি।

চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা ১৯৯৪ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। বঙ্গবন্ধু জাদুঘর ঘুরে দেখে তিনি লিখে গেছেন, এ এক গভীর মর্মস্পর্শী অভিজ্ঞতা। এমন একজন মহৎ মানুষকে নিছক বুলেটবিদ্ধ করে হত্যা করা হলো। তবে তাঁর অর্জনের স্মৃতি এ দেশে বেঁচে থাকবে। তাঁর অনুসারী এবং কন্যা যেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উচ্চতায় বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে সক্ষম হন, এমন প্রত্যাশা রেখে গেছেন চন্দ্রিকা।

শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংসদের স্পিকার কারু জয়সুরিয়া এসেছিলেন ২০১৬ সালের ৪ জুন। জাতির জনকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, পরবর্তী প্রজন্ম চিরতরে তাঁর নাম স্মরণ করবে।

নানা ভাষায় শ্রদ্ধা
বিশ্বনেতাদের অনেকেই নিজের ভাষায় বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। জাপানি, চীনা, আরবি, হিন্দি, উর্দুসহ নানা ভাষায় তাঁরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে লিখেছেন।

জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো তারো জাপানি ভাষায় বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে গেছেন। ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট, কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী, মিসরের শিক্ষামন্ত্রী, নাইজেরিয়ার শিক্ষামন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা তাঁদের অনুভূতির কথা লিখে গেছেন।
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর এবং সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশি বিভিন্ন ভাষায় লেখা বিশ্বনেতাদের মন্তব্য বাংলায় অনুবাদ করার চিন্তা করছে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর। এ ছাড়া এগুলোর একটি সংকলন প্রকাশ করা হবে।

তিন ধরনের মন্তব্য খাতা
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে তিন ধরনের মন্তব্য খাতা রাখা হয়। একটি ভিভিআইপিদের জন্য, বিশেষ করে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, মন্ত্রী, বিশিষ্ট নাগরিক এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের জন্য এই খাতা সংরক্ষিত থাকে। আরেকটি খাতা আছে দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য, যেটি ভিআইপি খাতা নামে পরিচিত। আর সাধারণ মানুষের জন্য রয়েছে আরেক ধরনের মন্তব্য খাতা। কয়েক দিন পরপর এই খাতার শত শত পৃষ্ঠা ভরে যায়।

এ প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান বলেন, বঙ্গবন্ধু যে সাধারণ মানুষের নেতা ছিলেন, তা জাদুঘর পরিদর্শনকারীর সংখ্যা এবং মন্তব্য খাতায় লেখা অতিসাধারণ মানুষের বক্তব্য থেকেও বোঝা যায়।

অনুপ্রেরণার বাতিঘর
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের দেয়ালে বুলেটের চিহ্ন এবং বঙ্গবন্ধু যে সিঁড়িতে গুলির আঘাতে পড়ে গিয়েছিলেন, সেই স্থান দেখে বিশ্বনেতাদের অনেকেই মর্মাহত হয়েছেন। ২০১৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর জাদুঘর পরিদর্শন করে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, বিংশ শতাব্দীর অন্যতম নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। এ কারণেই মৃত্যুর ৪০ বছরের বেশি সময় পরও শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ ও শ্রদ্ধা করা হয়।

গত বছরের জানুয়ারিতে এসে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো মন্তব্য বইয়ে লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানবজাতির জন্য ছিলেন অনুপ্রেরণার বাতিঘর।

সাধারণ জীবনযাপনে মুগ্ধ
সৌদি আরবের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়নবিষয়ক উপমন্ত্রী খালেদ আল ওতাইবি বঙ্গবন্ধুর সাদাসিধে জীবনযাপনের বিষয়টি জেনে মুগ্ধ হন। ২০১৭ সালের আগস্টে এসে খালেদ লিখেছেন, ‘জাতির পিতা ছিলেন একজন দুর্দান্ত অনুপ্রাণিত মানুষ, যিনি তাঁর জনগণের সংগ্রামের প্রতীক। তাঁর পরিবারকে দেখলাম এবং তাঁদের জীবনযাপনের পদ্ধতি আমাকে এই ধারণা দিল যে তাঁরা সাধারণ জীবন যাপন করতেন।’

বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সহকারী কিউরেটর কাজী আফরিন জাহান জানান, প্রায় সবাই একই প্রশ্ন করেন, কেন এমন অরক্ষিত স্থানে বা সাধারণ বাড়িতে একজন প্রধানমন্ত্রী বসবাস করতেন। বিশ্বনেতারা যখন বঙ্গবন্ধুর গুলিবিদ্ধ হওয়ার স্থান দেখেন, শিশু রাসেলকে হত্যার বর্ণনা শোনেন, তখন শিউরে ওঠেন।

৩২ নম্বর বাড়ি, রাজনীতির বাতিঘর
বাংলাদেশের মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির পরিচয় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি। সেই বাড়ি বাঙালির তীর্থকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর থেকে এই বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবার এই বাড়িতে নিহত হন।

১৯৯৪ সালের ১১ এপ্রিল বাড়িটিকে ট্রাস্টের অধীনে দেওয়া হয়, এরপর বাড়িটি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে যাত্রা শুরু করে।

জাদুঘরের ভিভিআইপি খাতায় বাংলায় লেখা একটিমাত্র মন্তব্য, আর তা লিখেছেন বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ২০১৬ সালের ১৯ আগস্ট জাদুঘর পরিদর্শন করে আবদুল হামিদ লিখেছেন, ‘মুক্তিসংগ্রামে যেমন এ বাড়িটি বাঙালির দিকনির্দেশনার উৎস ছিল, তেমনি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরও নতুন প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে।’

ফেনীর হালচাল
ফেনীর হালচাল